কে আমি ?

মন ঠিক কতক্ষণ, কোথায় বা কোন বিষয়ের উপর অনুভূত হয় জানা নেই কারো। সাধারণত মনকে তিনটি ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করা হয়। প্রথমত, মন বলতে চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা-এই মানসিক কাজ গুলোর সমষ্টিগত রূপ বুঝায়। দ্বিতীয়ত, মন বলতে চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা -এই মানসিক কাজগুলি থেকে স্বতন্ত্র দেহাতিরিক্ত এক স্থান, অপরিবর্তিত আধ্যাত্ম সত্তাকে বুঝায়। তৃতীয়ত-, মন বলতে বুঝায় এক মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ যা চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া ছাড়া কিছুই নয়, অথচ যা নিজের স্বাতন্ত্র্য না হারিয়ে এই সকল মানসিক কাজের ভিতর দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে। প্রথম টি হলো মন এর অভিজ্ঞতামূলক মতবাদ পরেরটা আধ্যাত্মিক-মতবাদ, শেষেরটা ভাববাদীদের মতবাদ। মানুষের মনের তিনটি স্তরও রয়েছে যা এর আগেও আমি খুঁজেছি (https://shorturl.at/mvNUY) ...
জগতের সকল ধর্ম এবং দর্শন মন এবং প্রাণ'কে নিয়ে কিছুনা কিছু বলেছে ।
পবিত্র আল-কোরআন বলছে- কুল্লুু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত। অর্থ: প্রত্যেক নফসই (জীবন) মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৩৫) ।
বাইবেলে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষের মন এবং আত্মা হচ্ছে অবিনশ্বর বা অমর। শারীরিকভাবে মৃত্যুর পর মন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় (আদিপুস্তক ৩৫:১৮; যিরমিয় ১৫:২ পদ)। বহু আত্মিক ও আবেগীয় অভিজ্ঞতার মধ্যমণি হয়ে আত্মার সাথে সাথে মনও বিরাজমান থাকে (ইয়োব ৩০:২৫; গীতসংহিতা ৪৩:৫; যিরমিয় ১৩:১৭ পদ)। মন এবং আত্মা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু বিভাজিত (ইব্রীয় ৪:১২ পদ)।
শ্রীমদ্ভবগদগীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
" উদ্ধরেদাত্মনাত্মনং নাত্মানমবসাদয়ে।
আত্মৈব হ্যাত্মানো বন্ধুরাত্মৈর রিপুরাত্মনঃ।। "
”মানুষেল কর্তব্য হচ্ছে তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেক উদ্ধার করা। মনের দ্বারা আত্মাকে (নিজেকে) অধঃপতিত করা কখনই উচিত হয়। মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়ে থাকে।” (গীতা ৬।৫
" উদ্ধরেদাত্মনাত্মনং নাত্মানমবসাদয়ে।
আত্মৈব হ্যাত্মানো বন্ধুরাত্মৈর রিপুরাত্মনঃ।। "
”মানুষেল কর্তব্য হচ্ছে তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেক উদ্ধার করা। মনের দ্বারা আত্মাকে (নিজেকে) অধঃপতিত করা কখনই উচিত হয়। মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়ে থাকে।” (গীতা ৬।৫
বেদ এর বাণী'তে আছে, মন চলে যায় আকাশে, পাতালে, পাহাড়ে, সাগরে। মনকে নিয়ে আসো নিজেরই অন্তরে, যেন তা থাকে তোমারই নিয়ন্ত্রণে । [ঋগবেদঃ ১০.৫৮.২]
ফকির লালন সাঁই ছিলেন মানবতাবাদী কবি। তিনি তার কথায় বলেছেন- “ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়ে। ” এখানের পাখিটাই হচ্ছে আমাদের আত্মা। বাউল দর্শন অনুযায়ী প্রতিটা দমের সাথে আত্মাটা দেহে প্রবেশ করছে, দমটা ছাড়ার সাথে সাথে আবার চলে যাচ্ছে। দমটা ছেড়ে দেয়ার পর আর প্রবেশ করে না করলেই আপনি মৃত। এর কারণ হলো আত্মাটা আর প্রবেশ করছে না। যদি তিনি ধরতে পারতেন, মনবেড়ি দিতেন পাখির পায়ে যেন আর যেতে না পারে।
মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় আত্মা হল মন। দর্শনে soul, mind, self বুৎপত্তিগত অর্থে যা পূর্ব অভিজ্ঞতায় স্মরণ রাখতে পারে তাই হল আত্মা/প্রাণ।
এখন সর্বশেষে শুরুর কথাটি আবারও বলতে হয়, আমরা মানুষ একটু এদিক ওদিক হলেই মন এবং প্রাণ'কে নিয়ে টানাটানি করি। আরো বলে থাকি আমার মন, আমার প্রাণ, আমার চোখ, আমার হৃদয়, আমার শরীর ইত্যাদি। আচ্ছা, “আমি” কি প্রাণ? “আমি” কি মন? “আমি” কি হৃদয়? যদি তাই হয়,তবে-
প্রাণকে “আমি” না বলে “আমার”,
মনকে “আমি” না বলে “আমার”,
হৃদয়কে “আমি” না বলে “আমার” একথা বলি কেন?
যখন কেউ দাবী করে যে, প্রাণ আমার, মন আমার, শরীর আমার এবং হৃদয় আমার, তখন দাবীদারটা কে?
প্রাণকে “আমি” না বলে “আমার”,
মনকে “আমি” না বলে “আমার”,
হৃদয়কে “আমি” না বলে “আমার” একথা বলি কেন?
যখন কেউ দাবী করে যে, প্রাণ আমার, মন আমার, শরীর আমার এবং হৃদয় আমার, তখন দাবীদারটা কে?
আমিটা কে? কে এই আমি ?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন