সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।

" ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না " তার মৃত্যুর পনেরো দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে এতটুকুই বলা হয়। তিনি জাত পাত ধর্ম বর্ণ সবকিছুর ভেদাভেদ ভুলে মানব ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলেই তাকে সর্বপ্রথম " মহাত্মা " উপাধি দেওয়া হয় .... নিজের সম্পর্কে তিনি তার গানের মধ্যে বলে গেছেন 

" সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে 
লালন বলে জাতের কিরুপ,
দেখলাম না এই নজরে "

- কাঙাল হরিনাথ তাঁকে জানতেন, মীর মশাররফ চিনতেন, ঠাকুরদের হাউসবোটে যাতায়াত ছিল, লেখক জলধর সেন বা অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তাঁকে সামনাসামনি দেখেছেন কতবার, গান শুনেছেন, তবু জানতে পারেন নি লালনের জাতপরিচয়, বংশধারা বা ধর্ম। ( সুধীর চক্রবর্তী )

-কিছু সূত্রে পাওয়া যায় লালন শাহ ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার হরিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ( উইকিপিডিয়া )

-লালনের সম্পর্কে বিশদভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যাইনা। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তার নিজের রচিত অসংখ্য গান। নানা জনের নানা মত থাকা সত্ত্বেও লালনের প্রতিটি গানের ভাষা শৈলৗতে, সুরে, কথায়, টানে, ভঙ্গিমায় এবং উচ্চারণে ঝিনাইদহের আঞ্চলিকতা শতভাগ বোঝা যায় যার কোনোটির সাথে কুষ্টিয়া কিংবা যশোরের ভাষাগত কোনো মিল আমি পাইনি যাইহোক, মহাত্মা লালন ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রতি শীতকালে আখড়ায় একটি ভান্ডারা (মহোৎসব) আয়োজন করতেন। যেখানে সহস্রাধিক শিষ্য ও সম্প্রদায়ের লোক একত্রিত হতেন এবং সেখানে সংগীত ও আলোচনা হত। তার মৃত্যু দিবসে ছেউড়িয়ার আখড়ায় স্মরণ উৎসব হয়। দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ লালন স্মরণোৎসব ও দোল পূর্ণিমায় এই আধ্যাত্মিক সাধকের দর্শন অনুস্মরণ করতে প্রতি বছর এখানে এসে থাকেন। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট লালন সাঁইজীর ১২৭ তম তিরোধান দিবস (১লা কার্তিক ১৪২৪, ১৬ অক্টোবর ২০১৭) উপলক্ষ্যে লালন স্মরণোৎসব। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানটি "লালন উৎসব" হিসেবে পরিচিত ...
.
তথ্যসূত্রঃ উকিপিডিয়া, লালন একাডেমী, লালনগীতি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত মনের মানুষ উপন্যাস এবং এস. এম. লুৎফর রহমান, "লালন শাহ্‌ জীবন ও গান", ৩য় সংস্করণ

ছবিঃ লালনের জীবদ্দশায় তৈরি করা একমাত্র চিত্র, ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে এঁকেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু

রূপ; বহুরূপ !