রূপ; বহুরূপ !
তীব্র শীতল গভীর অন্ধকার মঞ্চে সূর্যোদয় ঘটছে। মৃদু লাল আভার স্নিগ্ধতা ফোটায় ফোটায় আলোকিত করে তুলছে মঞ্চের একাংশ। আর সেই আলোতে স্বল্প সংখ্যক চরিত্রের ভিড়ে দেখতে পেলাম হাজারও রূপ ! গহীনের অতল গহব্বর থেকে হাচড়ে পাচড়ে জেগে উঠছে এক এক করে । কিছুক্ষণের মধ্যে কলাহল শুরু হলো। এতক্ষণে মঞ্চ সম্পূর্ণ আলোকিত তবে এখানেও আলোর সাথে ছায়া রূপের খেলা চলতে দেখা যায় ! যদিও মঞ্চের প্রতিটি চরিত্রই মূল চরিত্র এবং প্রতিটি চরিত্রেরই গুরুত্ব স্বস্থানে সমান। আলোর প্রতিফলন চোখে পড়ার পর ক্রমেই রূপে রূপে দৃষ্টি বিনিময়, সংলাপ এবং ভাবের আদান প্রদান শুরু হলো। মঞ্চে এখন নানা দৃশ্যপটের সূত্রপাত ঘটছে। কিছুক্ষণ অন্তঃ অন্তঃ প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন, থমথমে পরিবেশে রূপান্তর এবং পুনরায় বাতাসের ভেলায় কলরব ভেসে এসে গুড়িয়ে দিচ্ছে সবকিছু -
মঞ্চে ঋতু পরিবর্তনের থেকেও দ্রুত চরিত্রের রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। এক একটি চরিত্রে অনির্দিষ্ট রূপ বৈচিত্র দেখা যাবে আর এভাবেই সাজানো হয়েছে বর্ণিল এই মহামঞ্চ। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি চরিত্র মঞ্চের নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থান থেকে সংলাপ আওড়ে চলেছে। প্রকৃতি অনুসারে মঞ্চের একটি চরিত্রের সঙ্গে অপর চরিত্রের দৃষ্টি এবং সংলাপ বিনিময় চলছে। যেহেতু প্রতিটি চরিত্রের জন্য অনির্দিষ্ট রূপ নির্ধারিত রয়েছে সেহেতু মঞ্চ এখন রূপের ছটায় আলোকিত হয়ে আছে। ক্রমেই সম্পূর্ণ পরিস্থিতি একটি নির্দিষ্ট ধারায় অতিবাহিত হতে লাগলো। এখন, এই মুহূর্তে মঞ্চের মূল অংশে দৃষ্টি দেওয়ার সময় -
(১)
ছুটে চলা চরিত্রগুলোর ভিড় থেকে আত্মচিৎকার করে উঠছে অগনতিক রূপ, কতশত বর্ণময়! কি সে রূপের বাহার … কোনো একটি চরিত্রের একটি রূপ উচ্চ স্বরে হেসে চলেছে কিন্তু ঠিক সেই রূপের বিপরীত রূপে চলছে হু হু আর্তনাদ। কোনো রূপ বাকা চোখে চেয়ে আছে অন্য রূপের মায়ায় কিন্তু তার আড়ালেই আরেকটি রূপ খুঁজে চলেছে খুব চেনা একটি রূপের মোহকে, যে রূপের মোহের মোহে বিমোহিত সে … কি অদ্ভুত ! একই সময়ে একই চরিত্রে খেলা করছে অগনতিক রূপ। কোনো রূপ হারিয়ে গিয়েছে আকাশের শেষ প্রান্তে উড়ে চলা শঙ্খ চিলের পাখায় ভর করে আবারও কোনো রূপ ভেসে চলেছে কোনো নাম না জানা খরস্রোতা নদীর মোহনায়, রূপের মোহে -
প্রতিটি চরিত্রে ক্ষণে ক্ষণে চলছে রূপের ঋতু বৈচিত্র্য ! কিছু রূপ বড্ড মায়াবী, রূপ দিয়ে ভুলিয়ে দিচ্ছে মঞ্চের বাকি সবকিছুকে। সে রূপের মায়া জ্বালে আটকে পড়ে থাকে কতশত রূপ। হ্যাঁ, সেখানেই আটকে থাকে। আবার ঠিক সেই মুহূর্তেই কিছু রূপ সেই মায়ার বাধনে না আটকেই রস ভোগ করে চলেছে ! মঞ্চে সে সকল রূপের চোখে রঙ্গিন চশমা দেখা যাচ্ছে। চরিত্রগুলোতে রূপের আগমন ঘটছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী। প্রতিটি মুহূর্তে হাজারও রূপ ভর করছে এক একটি চরিত্রে… কখনো তা ক্ষণস্থায়ী বা কখনো চিরস্থায়ী। কিছু রূপ ঝরে পড়ছে বসন্তের ঝরা পাতার মতো, তখন আবার সেই মায়াবী রূপের মোহ জ্বালে আটকে থাকা রূপগুলো দৃষ্টি বদল করছে, রূপায়ন !! মঞ্চের কোনো একটি কোণে একটি চরিত্র কেদে উঠল, তাকিয়ে দেখি তার শুধুই দুইটি রূপ। হাসি আর কান্না মিলেই চরিত্রের নামকরণ করা হয়েছে “শিশু রূপ”। এখানে প্রতিটি রূপই বিপরীত রূপকে মুহূর্তে আকর্ষন করছে আর পাশাপাশি তীব্র বিকর্ষনের উৎপাত চোখে পড়ছে খুবই কম ! ভয়ানক রূপের বিকর্ষন শক্তি তীব্র -
(২)
খেয়াল করে দেখতে পেলাম, চরিত্রের আকার আকৃতি আছে কিন্তু রূপের কোনো আকার আকৃতি নেই ! চেহারার প্রতিফলন ঘটছে কিন্তু রূপের কোনো প্রতিফলন মঞ্চের কোথাও ঘটছে না। এই মঞ্চে রূপ সম্পূর্ন নিরাকার !! সময় এবং বয়স অনুসারে চরিত্রায়ন করা হয়ে থাকলেও মঞ্চের কোনো চরিত্রের চাওয়া কিংবা পাওয়া নেই। রূপের বোধশক্তি, সঙ্গা, চেতনা এবং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে চাওয়া এবং পাওয়াগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে !! অকল্পনীয় ভাবে … কিছু রূপ খেলা করছে নিজের সাথে! নিজ চরিত্রকে বিষিয়ে তুলছে কিন্তু থামতে পারছে না। একই সময়ে একই চরিত্রের অন্য একটি রূপ সবকিছুই অনুধাবন করছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, ক্লান্ত…তবুও খেলছে পাকা খেলোয়াড়ের মতোই, বড্ড ক্লান্ত সে -
প্রকৃ্তির রূপ যেমন দিক বদলিয়ে কখনো উজ্জ্বল, উচ্ছ্বাসিত, কাব্যিক, রসাত্মক, রোমান্টিক কিংবা ভয়াবহ হয়ে থাকে তেমনি মঞ্চের চরিত্রগুলোর রূপেরও দিক বদলে যাচ্ছে। সেই পরিবর্তন প্রকৃ্তির চেয়েও দ্রুত এবং ব্যতিক্রমী। প্রকৃ্তির আক্রোশ ভয়াবহ হয়, সেই ভয়াবহতা জাগতিক সবকিছুকে থমকে দিতে সক্ষম। এদিকে রূপের ভয়াবহতাকে কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা দেওয়া চলে না। মঞ্চে যে রূপের ভয়াবহতা চলছে তা সবকিছুর বিনাশ ঘটিয়ে দিচ্ছে চিরতরে। কয়েক মুহূর্তে বিলোপ করে দিচ্ছে অস্তিত্বের কিন্তু সেখানে নেই কোনো তাণ্ডব, না কোনো ঝড়ো হাওয়া, জলোচ্ছ্বাস কিংবা তার থেকে ভয়াবহ কিছুই !!! কোনো রূপের ভয়াবহতা এতটায় নির্মম, যে আক্রোশ- যে কোনো দুর্যোগকে হারিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে। এরই মাঝে সেই আক্রোশে বশীভূত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে অসংখ্য রূপ। মঞ্চের কিছু রূপ সেটাই করছে, দেখছি … বস্তুর রূপ পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ কিন্তু ব্যক্তিরূপ ? দেখছি বদলে যাচ্ছে মুহূর্তে, গল্প কিংবা উপন্যাসের মতো সহজে নয় -
মঞ্চে চরিত্রের কোনো আবেগ অনুভূতি নেই কিন্তু রুপের ? বাতাসের ঝাঁপটায় রূপ বদলে যাচ্ছে, প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন শ্বাস রুদ্ধকর এবং থমথমে। আলো ক্রমেই হালকা হয়ে আসছে। ব্যস্ততা কমে আসছে। কোথাও কোথাও রূপের বিলাপ চলছে আবার কোথাও সুখের অনুভূতি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে -
(৩)
কিছু রূপের সংলাপের সমাপ্তি ঘটছে। তাদের আর কোনো শব্দ নেই, বর্ণ নেই, নেই কোনো স্পন্ধন। তারা শুধু পলকহীন ভাবে চেয়ে থাকে। তাদের অনুভূতি গুলোও নিষ্প্রাণ। তবুও তারা বেঁচে আছে, রূপের সাগরে, বহুরূপীদের ভিড়ে !!! মঞ্চে সূর্যাস্ত ঘটছে, একটু পরেই গোধূলি বেলা। লাল আভায় অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে রূপ; বহুরূপ -
মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে -
( রূপ; বহুরূপ !)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন