একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু
সবাই সব কথা বলেই দিয়েছে ! আমি আর নতুন করে কি বলব । হরিণাকুন্ডু, হরিশপুর আর লালন শাহ্ কে নিয়ে কে কবে ভেবেছে বলুনতো ? আমরা যারা হরিণাকুন্ডুর মানুষ তারাই বা কতটুকু ভেবেছিলাম ? রাজনৈতিক কোনো বিষয় এটা ছিল না যেখানে পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ থাকে । এটা ছিল হরিণাকুন্ডুর গণমানুষের প্রাণের দাবী, মাটির দাবি "একটি একতারা " । আমি আবারো বলছি এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় ছিল না, এটা ছিল একটা পাগল মানুষের আপ্রাণ চেষ্টা !! যে বার বার থমকে গেছে কিন্তু হাল ছাড়েনি । আবার স্বপ্ন দেখেছে ... আমি নিজেকে এই জন্যই ভাগ্যবান বলব যে, এই পাগল মানুষটার সাথে থেকে কবে যেন আমিও তার স্বপ্নে ঢুকে গেলাম !! সেদিন রাতে যখন ভায়ের সাথে কথা বলছিলাম ঘরটা ছিল অন্ধকার, তার পরেও আমি তার প্রতিটা কথাতে চেহারার পরিবর্তন বোঝার চেষ্টা করছিলাম ... একটা কথা আমি এখনো স্পষ্ট শুনতে পাই " হৃদয়, হরিণাকুণ্ডুর জন্য কিছু একটা কর" । কেন যানিনা মানুষটা যতবার কিছু করতে বলেছে কেমন করে যেন আমি সেগুলো করে ফেলেছি ! সেই বাউল হাট থেকে শুরু ... কি করা যায় ভাই ? আমি তাকে অন্য সবার মত বিশেষ ভাবে বিশেষায়িত করতে পারব না তবে এতটুকুই বলব সেদিন রাতে এটা বুঝলাম হরিণাকুন্ডুর জন্য সত্যই কিছু একটা করার দরকার , এটা হরিণাকুন্ডুর মানুষ হয়ে আমরা কোনোদিন কি ভাবতে পেরিছি ? আমাদের লালনকে নিয়ে ! যার গান, কথা,সূর, ছন্দ সারা জগতের মানুষের প্রাণ ছুয়ে গেছে । যে মরমি কবি একটা একতারা দিয়ে জয় করে নিয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষের মন ... আমরা কি একটি বারের জন্যও তার কথা ভেবেছিলাম ? ভেবিছিলাম কি, এই সূর, কথা, গান আর একতারা আমাদের সম্পদ !!! Liku Ekramul Haque ভেবেছিল আর আমাকে একটানে তার ভাবনার জগতে টেনে তুলেছিল । কিভাবে জানিনা, এই আন্দোলন সফল করতেই হবে এটাই ছিল আমার ভাবনা । অনেকে অনেক কথা বলেছিল আমাকে । আমি নাকি পাগল । অনেকে বলেছিল " পুরান পাগলে ভাত পাই না নতুন পাগলের আমদানি " !!! অনেকে বলেছিল " অনেক দেখেছি আর কত ? " আমি বরাবরই চুপচাপ । কখনো কারো কথার জবাব দেয়ার চেষ্টা করিনি । ভেবেছিলাম ডাক দিলে হয়ত কেউ আসবে না !! বিশেষ কিছু মানুষের সাথে আলোচনা করলাম " লালন শাহ্ এর ভাস্কর্য ও একতারা " নিয়ে । ১৬ই মে ২০১৭ সকালে যখন উপজেলা চত্বরে দাড়িয়ে আছি তখনো বুঝতে পারিনি কি হতে চলেছে ! কিছুক্ষনের ভেতরেই হরিণাকুন্ডুর সকল স্কুল, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারন মানুষ পথে নেমে এলো , তখন সকাল ১১.৩০; আমাদের হাত ধরে দাড়িয়ে গেল প্রকট রোদের ভেতরে !! সত্য বল সুপথে বল ওরে আমার মন এটাই ছিল আমার ব্যানারের টাইটেল । এত আনন্দিত আমি হয়েছিলাম কোনোদিন ? একজন নয়, দুজন নয় , হাজার হাজার মানুষ একটা দাবি নিয়ে একই সাথে দাড়িয়ে আছি । বেশি কিছু না আমাদের একটা " ভাস্কর্য ও একতারা " দরকার । ৯ আগষ্ট ২০১৭ হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় আমাদের ভাস্কর্য ও একতারা নির্মাণের দাবী অনুমোদিত হয় । কেউ কি ভাবতে পেরছিল কি হতে চলেছে ! ৬ জুলাই ২০১৮ সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে একতারা স্থাপন হলো !! ভাবতে পারিনি এত দূরে থাকব, দূর থেকে বার বার মনে হচ্ছে ভায়ের হাসি মুখটার কথা আর সেই কথা " হৃদয়, হরিণাকুন্ডুর জন্য কিছু একটা কর"। ভাই, এই ছোট্ট হৃদয় যা কিছু করেছে তার সবটুকুর পেছনে আপনার হাসি মুখ দায়ী ! যতবার পরিকল্পনা করতে বসেছি ততবার অবাক হয়েছি আপনার কথা শুনে । ভালোবাসি ভাই, অনেক ভালবাসি আপনাকে। অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ । জানিনা আপনার কথা কতটুকু রাখতে পেরিছি তবে এতটুকু বলতে পারি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেছি "হরিণাকুন্ডুর জন্য কিছু একটা করার দরকার" বুঝতে পেরেছি মাটির কাছে ঋণী থাকতে নেই !!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন