আমার গল্পে এই চরিত্রটি একটু বেশিই "বিশেষ"


জীবনের কোনো এক অধ্যায়ে এক‌টি বিশেষ চরিত্রের কথা বলা আছে, আমার গল্পে এই চরিত্রটি একটু বেশিই "বিশেষ" !! শুধুমাত্র চোখের দিকে তাকিয়েই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে প্রতিটা মূহুর্তে, ছেলেটার সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল ঠিক এর থেকেও গভীরতার। যা খুব সংক্ষিপ্ত আকারে আজ বলতে চাই, বলা দরকার। সিহাব এক‌টি নাম, আমার ছেলের নাম। প্রতিটি সন্তান যেমন বাবার হাত ধরে হাটা শেখে ঠিক তেমনি শিহাবও আমার হাত ধরে হাটতে ভালবাসত। আমার কাছাকাছি থাকতে ভালবাসত। আমার সাথে ইতিহাস গড়তে ভালবাসত। আমার কথাগুলো শুনত আর মনের ভেতর গেথে রাখত। সিহাব, আমার ছেলের নাম, আমার বন্ধুর নাম, আমার মামার নাম, আমার ডায়েরির নাম আর আমার জীবনের এক‌টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম। পরিচয় হয়েছিল সম্ভবত কোনো এক নাটকীয় দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে। একটা গাং নিয়ে চলতাম, তখন আমি হয়ত ৭-৮ বছরের কাছাকাছি, সেই সময়টাতেই নামটা প্রথম শুনি। আমার থেকে কিছু বছর বেশি বয়সের একটি ছেলেকে দেখতাম চুপচাপ থাকতে। ওদের বাসার পিছনে রাস্তার ওপরে ছিল আমার ক্রিকেট পিচ, নানা বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িটা। কিভাবে জানিনা একদিন কাছে টেনে নিলাম, হয়ত এটাই বিধাতা তার বিধানে লিখে রেখেছিল। আর সেই থেকেই শুরু হলো সব নিত্যনতুন ঘটনা আর গল্পের সুত্রপাত! হাজার রাতের গল্প, হাজার মাইল পথ চলা আর আমার জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার সাক্ষী ... জীবনের প্রথম বাইক এক্সিডেন্ট এর কথা আজও মনে পড়ে। পুকুরে নেমে কাদা ছোড়াছুড়ি আর ঘন্টার পর ঘন্টা সাতার! আমাকে নিয়ে পানিতে ডুবে যাওয়া, তখন ছোট্ট আমি। ইমন, আলামিন, রানা আর সিহাবকে নিয়ে ওদের গাব গাছে উঠে আড্ডা। চরের মাঠের পুকুর পাড়ে বসে আমিষ আর নিরামিষের সময়টা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম । কোথা থেকে শুরু আর কোথা গিয়ে শেষ করব? একদিন আব্বুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাকে সংগে নিয়ে গেল হলে সিনেমা দেখতে, আমার জীবনের প্রথম! হ্যা, আমার অনেকগুলো প্রথমের সাক্ষী এই মানুষটা। অনেক ভালো আর অনেক মন্দের জীবনটা ওর সামনেই রচিত হয়েছে। একটা সেই আমি থেকে কিভাবে একটা এই আমি হয়েছি সেটা ওর থেকে ভাল আর কেউ বলতে পারবে না। সব থেকে আজব করা বিষয় যেটা, সেটা হচ্ছে আজ অব্দি কোনো দিন মনে পরে না এক‌টি বারের জন্য কথা কাটাকাটি বা সম্পর্ক ঢিল হয়েছে। পথের কোনো বিভীষিকা আমাদের আটকাতে পারেনি কোনভাবেই, ছন্নছাড়া । রাতের পর রাত কেটেছে আকাশের দিকে তাকিয়ে, গল্প করে। লোকালয় থেকে অনেক দূরের মাঠের মাঝে এক‌টি প্রিয় বট গাছ ছিল আমাদের। ঈদের দিন মানেই নামাজ পর নিরিবিলি জায়গায় সময় কাটা‌নো, বিন্দাস ঘুরেফিরে। ৫০ সি.সি নিয়ে এদিক ওদিক হারিয়ে যাওয়া অথবা সাইকেল করে অজানাতে পাড়ি। একবার তোহ মল্লিক পুরের বট গাছ খুজঁতে গিয়ে সেই একখানা কান্ড ঘটে গেল, পাগলামি। এসএসসি দিচ্ছি তখন সিহাব এডমিশনের জন্য ঝিনাইদহের মেসে। আমার যাতায়াত ছিল ওদের অনলাইন এডমিশন ফর্ম পূরনের জন্য। ঘটনাচক্রে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ঐখানে আমিও থাকব, এটাও ছিল আমার জীবনের প্রথম ঘটে যাওয়া এক‌টি ঘটনা। ভাবা মানে পরিক্ষা দিয়েই মেসে হাজির, একরোখা ... আকাশে মেঘ দেখলে বৃষ্টির পেছনে ছুটতাম দুই বাপ বিটা! অনুভূতি গুলো অন্যরকম দিকে মোড় নিচ্ছে, নিক। মেসে এক রুমে থাকতাম, ফাজলামি । একবার পুরো ২০ কি.মি একা সাইকেল চালিয়েছিল আমাকে পিছনে নিয়ে!! ঢাকায় যাচ্ছি, সিহাব অপেক্ষা করছে গাবতলী। ঘাটে জ্যাম, পৌঁছাতে দেরি, যেতে হবে বসুন্ধরা আবাসিকে। যখন পৌছালাম উত্তরা লাইনের সব পরিবহন বন্ধ!! কোন রকমে লেগুনায় ঝুলে ১০ নাম্বার, পূরবী তারপর .... সারা পথ চেকপোস্ট এ চেক হতে হতে শেষ রাতে হেটে গন্তব্যে ... হলুদ ল্যাম্প পোস্টের আলোতে রচিত এক‌টি রাত। একবার দুই দিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম, মাতাল । পুরান ঢাকার অলিগলি চষে ফেললাম বাপ বিটায়, আত্মহারা। দিয়াবাড়ির আড্ডা আর চা অথবা নুহাশ পল্লীর একদিন ছিল অনেক আনন্দের, দিশাহারা। আমার খারাপ সময় গুলোতে চুপচাপ তাকিয়ে থাকত মুখের দিকে, কষ্ট পেত কিনা জানিনা। একটা সিহাব, আজ আমার থেকে লক্ষ যোজন দূরে কোথাও ... তবুও আজও আমার সাথে আছে সর্বক্ষণ। সংক্ষেপে বলতে গিয়ে অনেক কিছুই বাদ গেল হয়তো তবে দূরত্বের সৃষ্টি যে এভাবে হবে বুঝতে পারিনি! বুঝলি বিটা, কিছু শূন্যতা প্রকৃতি ইচ্ছে করে পূরন করে না, শুন্য রাখে, অপূরণীয় থেকে যায়, ভালোবাসা । জীবনের কোনো এক সময় আবারও দেখা হবে, হাজারো গল্পের ভীড়ে হারাবো সেদিন, অনেক কথা জমে গেছে । সব লিখে নিস। তোর বাপ ভাল আছে, তুই ভাল থাকিস ... ...

#ছোটগল্প #ভালোবাসা #হাজার_রাত #ছন্নছাড়া #দিশাহারা #ফাজলামি #একরোখা #ভবঘুরে #ডুব_সাতার #চরের_মাঠ #মিয়ার_দালান #মধুপুর #ঢাকেশ্বরী #ঝিনাইদহ #অব্যক্ত #গিটার_গান #টিউটোরিয়াল #লিচু_চোর #মন_খারাপ#বাকিটুকু_বাকিথাক……

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু

রূপ; বহুরূপ !

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।