উড়ে চলেছি বাতাসের ভেলায়, শূন্যতে অসংখ্য গল্প !! আমার শূন্যতায়, আমার অনুভবে ...

শুন্য (০) ... গণিত শাস্ত্রে শূন্য’র ব্যবহার না থাকলে আজ আমরা হিসাব শূন্যতায় ভুগে মরতাম !!! আর সবথেকে বড় কথা হলো পৃথিবীটা সৌ্রজগতের মাঝখানে শূন্যে ঝুলে আছে। এতে করে এটা বলা যেতে পারে যে, জগতের সবকিছুই শূন্যের মাঝে অবস্থান করছে। আরে শুন্য থেকেই তো সব কিছুর শুরু। ০,১,২,৩,৪...... !! কিন্তু যখন এই শূন্যের আশে পাশে কিছু থাকে না, তখন ঐ আশপাশের জায়গাটাতে সৃষ্ট অবস্থার নামকেই বলা হয় “ শূন্যতা ”। জীবনটা হলো সেই বিচ্ছিন্ন কিছু সংখ্যা, সেই বিচ্ছিন্ন কিছু সমীকরণ .. যে সংখ্যা গুলোকে এখান থেখে ওখান থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে হিসেবের খাতা ভরাতে হয় !! শূন্যতা পূরণ করতে হয় । 'শূন্যতা’ অনেক বড় একটা ভাবনার জায়গা ! শূন্যতা কতধরনের হতে পারে তা হয়ত আমি বলতে পারব না তবে কিছু কিছু শূন্যতা আমার হৃদয় ছুয়ে গেছে ! আমি যখন পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়, শহর এবং সব কিছু ছেড়ে শূন্যে অবস্থায় বের হলাম তখন থেকেই আমার ওপর শূন্যতা ভর করে !! অনেক মানুষের মাঝে থাকলেও সে শূন্যতা আমি প্রতিটা মূহূর্তে অনুভব করতাম। হৃদয়ে ভালোবাসা শূন্যতা থাকার কারনে সে সময়ে আকাশ পাতাল অনেক ধরনের চিন্তা ভাবনা শুন্য মাথার ভেতর সারাক্ষন আড্ডা দিত ! ব্যাচেলর বলে বাসা পাচ্ছিলাম না তার ওপর সম্পূর্ণ একা !! প্রথম কিছুদিন রাতে এমন অবস্থায় থাকতাম যে চোখ মেললেই আকাশের তারা দেখা যেত !! এক অন্যরকম শূন্যতা । অনেক কষ্টে জায়গা একটা পেলাম কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাসা মালিক এক রুম দেবে না, নিতে হলে এক ফ্লাট পুরোটায় নিতে হবে সাথে তিন মাসের এ্যাডভান্স!! পকেট শূণ্য করে সেদিন একটা শূন্য ফ্লাটে উঠে পরলাম না হলে বৃষ্টি আর পকেট মার আমাকে পূরো শূন্যে পাঠিয়ে দিত ! একদিন শূন্য পকেটে শহরের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে মাথায় আসল ঠিক এই মূহূর্তে কতজন মানুষ অর্থ শূন্যতায় ভুগছে !! শূন্যতা আমাকে বাতাসের সাথে কথা বলতে শিখিয়ে দিল .. যখন আমি ক্লান্ত অবস্থায় রাতে বাসায় ফিরতাম তখন অন্য ফ্লাটের সবাই ঘুমিয়ে পরত যার কারনে সম্পূর্ণ বিল্ডিংটায় শূণ্য মনে হতো ! ঐ রাতে যখন রান্না শুরু করতাম তখন শূণ্য মনের ভেতর থেকে কিছু সঙ্গীত মনের অগোচরে বের হয়ে যেত, চমকে উঠতাম প্রথম দিকে ! শূণ্য রুমের চারদেয়ালে প্রতিধ্বনি হতো আমার সুরগুলো !!! কিছুদিন পর ইচ্ছে করেই গলা ছেড়ে গান করতাম আর থেমে থেমে নিজের কন্ঠ নিজেই শুনতাম ... শূন্যের মাঝে ভেসে বেরানো কিছু শব্দ, কিছু গল্প ! আর একটা বিষয় খেয়াল করতাম শূন্যতার একধরনের সুগন্ধ আছে ... আমি শূন্যতার ঘ্রাণ নিতে শিখে গেলাম। মানুষের মন হলো স্বাভাবিক বা সাধারণ রূপ আর হৃদয় হলো গভীর অনভুতিময়। মন সবারই আছে; হৃদয় হয়ত সবার সব সময় থাকেনা, এই জন্য তারা হৃদশূন্যতায় ভোগে !! একদিন আমি পাহাড়ের কাছে গেলাম, পাহাড় আমাকে বলল যতই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা হোক, কেউ তাকে মাথা নত করাতে পারে না কিন্তু তার মাঝেও অনেক শূন্যতা !! শুনলাম পাহাড়ের কাছে তার শূন্যতার কথা ... সাগরের পাড় দিয়ে হাটতে হাটতে শুনলাম তার কান্না আর শূন্যতা ... সে অনেক কথা !! মাঝে মাঝে মনে হতো এই "শূন্যতা" নামক বিষয়টা হয়ত বিধাতা বিশেষ কোনো কারনে সর্বস্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে ! কিন্তু কারনটা কি ? সেদিন সকালে গির্জায় গেলাম ফাদারের সাথে কথা বলতে ... তিনি আমার সব কথা শুনলেন তারপর উত্তরে যা বললেন তা হচ্ছে, শূন্যতা হচ্ছে এমন একটা বিষয় যা দ্বারা বিধাতা প্রতিটা প্রাণীর মধ্যে একধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছেন !!! কি দারুন ব্যবস্থা, কি নির্মম !!! পরে অবশ্য একটা জিনিস ভেবে অনেক ভালো লেগেছিল। যে হাতে এই রহস্যময় জগতের ভাগ্য লেখা হয়েছে ঐ একই হাতে আমার ভাগ্যও লেখা হয়েছে !! এতে করে আমি নিশ্চিত হতে পারি ভাগ্য আমার একদম শূন্য নাও হতে পারে ! কিছু না হোক পায়ের নিচের মাটি টুকু তোহ আমার !!!!! উড়ে চলেছি বাতাসের ভেলায়, শূন্যতে অসংখ্য গল্প !! আমার শূন্যতায়, আমার অনুভবে ...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু

রূপ; বহুরূপ !

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।