খেতে চাইতাম না বলে আগে ঘুম পাড়িয়ে তার পর ঘুমন্ত অবস্থায় খাওয়ানো হতো !!
প্রত্যকেরই শিশুকালটা হয় একই রকমের । যেমন , প্রথমে খাওয়া শেষ করা তার পর ঘুম । কিন্তু আমার বেলায় সম্পূর্ন ভিন্ন !! খেতে চাইতাম না বলে আগে ঘুম পাড়িয়ে তার পর ঘুমন্ত অবস্থায় খাওয়ানো হতো ! সকাল , দুপুর ও রাত বলে কোনো কথা ছিল না ! আর এই কঠিন কাজটি খুব ধৈর্য্য এবং আদরের সাথে বছরের পর বছর করে গেছেন আমার আম্মু । সেই থেকে আজ অব্দি বাসায় থাকা অবস্থায় আমি কখনই নিজের হাতে খাইনা ! বদমাশ , বাদর কিংবা বিচ্চু এর কোনটায় আম্মুর মুখ থেকে কখনো বলতে শুনিনি তবে আমি যে প্রচন্ড দুরন্ত এটা খুব ভাল করেই তিনি জানেন । স্কুলে যেমনখুশি তেমন সাঁজ প্রোগ্রামে আম্মু আমায় সুন্দর করে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার আঙ্গিকে সাজিয়ে তুলল , বাসা থেকে বের হবার সময় দাদি একটা পান দিল যেন ফ্লেভারটা ভাল আসে কিন্তু, যা হবার তাই ! পান চিবিয়ে স্কুলে ঢুকতেই মাথা ঘুরে ঢপ !! তাই নিয়ে আম্মু সেদিন কত্ত কি যে করেছিল । আমার নামে কেউ নালিশ করলে তাকেই উল্টা বকা দেয়াটায় আম্মুর নিয়ম ! “ কত্তবড় সাহস ! আমার ছেলের নামে বাজে কথা !!” ছোট্টবেলায় গলায় মাংস বেঁধে সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছিলাম বলেই বোধহয় আম্মু এমনটা করে “ স্কুলে ক্লাস রয়েছে বলে আমায় না নিয়ে কোথাও গেলে আম্মু যখন ফিরে আসে আমি মুখ দেখেই বুঝতে পারি কি পরিমান চিন্তা করেছে আমায় নিয়ে । ছোট্ট থেকেই আমাকে স্বাধীন করে দিয়েছে কিন্তু বেঁধে রেখেছে অন্যরকম ভালোবাসায় । ক্লাস ফাঁকি অথবা টিফিন পর দলবল নিয়ে স্কুল থেকে পালাতে আমি দক্ষ ছিলাম , ফলে মাঝে মাঝেই আম্মুকে সাথে নিয়ে হেড স্যারের সামনে উপস্থিত হতে হত ! আম্মুর একটায় উক্তি , “ ও বাচ্চা মানুষ একটু আধটু করে থাকে !! “ (আমি তখন নবম শ্রেণীর বাচ্চা ) । সারাদিন বাইরে সময় দিয়ে রাতে রিলাক্স মুডে হাটতে হাটতে বাসার একটু দূর থেকে ধুপ ধাপ পা ফেলে বাসায় ফেরা আমার অভ্যাস, যেন সারাপথ এভাবেই এসেছি ! তারপর সামনেই বসে থাকা খাবার নিয়ে অপেক্ষমাণ ব্যক্তিটি বলবে হাতমুখ ধুয়ে সামনে আয় ! তিনি খুব ভালো করেই জানেন আমি ঠিক কোথা থেকে দৌড় শুরু করেছি কিন্তু বুঝতে দেন না , এটা আমি বুঝি । খুব আগ্রহের সাথে আম্মুর হাতে লক্ষ্মী ছেলের মত খেয়ে নেয় যদিও আমি বাগান বাড়ি থেকে পিকনিক করে আসলাম ! হুট হাট করে টাকার প্রোয়োজন হলেই সর্ব প্রথম আম্মুর শরণাপন্ন , ব্যস সমাধান !! অনেক অভিমানী আমার আম্মু তার পরেও আমার সাথে কখনো অভিমান করেনা । কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর কান্না , আমি ২ মিনিয়ে থামিয়ে ফেলতে ওস্তাদ ... দূরে থাকলে নিজ হাতেই খেতে হয় , আম্মুর কথা সারাদিনে কতবার মনে হয় তা আমি বলতে পারব না তবে মেসে যেদিন ডাউল আর আলু ভর্তা দেখি সেদিন আম্মুর হাতে আমার জন্য তৈরী স্পেশাল খাবারের কথা মনে পরে । তার কথা বলতে গেলে কয়েকটা প্রবন্ধ রচনা হয়ে যাবে তবুও শেষ হবেনা । এমন ছন্নছাড়া ছেলে কে এত আদর করে বড় করেছে যে বিশেষ ব্যক্তিটি , তিনি আমার আম্মু ❤️
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন