আমার এক খুশিতেই আমি খুশি !

আমার একটা খুশি আছে ! যে আমাকে ডাক দেয়ার সময় বিশ্ব হারামজাদা , ফাজিল , বাদর , পন্ডিত এমন অনেক ধরনের উপমা ব্যবহার করে থাকে । ঈদের দিন পৃথিবীতে এসেছিল বলে দাদা নাম রেখেছিল খুশি আর তার পর থেকেই ঈদগুলো সব খুশির ঈদ হয়ে গেল । একে নিয়ে বেশি কিছু লিখব না শুধু এটুকুই বলব , বড় বোন বলে ওকে কখনো ভয় কিংবা শ্রদ্ধা করিনি , ভালবেসেছি সবটুকু দিয়ে । ছোট থেকেই নাম ধরে ডাকতে পছন্দ করি । আমার অগোছালো জীবনের সবগুলো অধ্যায় ওর মুখস্থ , গোপন রাখতে গিয়েও কখনো তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি , যদিও খুশি আমার গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ! খুশি , আমার একমাত্র বড় বোন । যদি কখনো রান্না করতে যায় তাহলে রান্না ঘরের ভেতর থেকে যুদ্ধের শব্দ শোনা যায় । তারপর , আমার সামনে এসে বলবে “ দেখ ভাই , হাতের কি অবস্থা ... দেখ নখের কি অবস্থা ... লবণ ঠিক আছে কিনা দেখ হা হা হা ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি ওর থেকে ছোট্ট ছোট্ট জিনিসগুলোর ভাগ নিতে পছন্দ করি । ওর মুখ টিপতে আমার খুব ভাল লাগে । একে নিয়ে বেশি কিছু লিখব না শুধু এটুকুই বলব , একে ছাড়া প্রিন্স অফ পার্সিয়ার একটা লেভেলও পার করতে পারিনা আমি । সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাকে ডেকে দেবে “ ওঠ ভাই ওঠ !!! “ না উঠলে কিছুক্ষন পর আবারররর । আর আমার রুমটা নাকি ওর কাছে গোডাউন মনে হয় ! কি আর বলব একে নিয়ে , কিছুতে কিছু হলেই আমার সামনে এসে কেঁদে দেবে । সামলাতে সামলাতে কবে যেন আমি ওর বড় ভাই হয়ে গেছি । আমাকে ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ভয় পেয়ে যায় পাগলিটা । চাকরিতে যেমন মামা-খালুর রেফারেন্স লাগে তেমনি আমার বায়না গুলো পূরন করার জন্য মায়ের কাছে খুশিই আমার রেফারেন্স যদিও এর জন্য আমার পকেট কিছুটা হালকা হয় । এক কথায় কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) পদ্ধতি । আমার মাথা যন্ত্রনার সবথেকে বড় চিকিৎসা হচ্ছে ওর মাথা টিপে দেয়া । গল্পের ছলে কখন যে সবটুকু খাবার খাওয়ায়ে দেবে সেটা আমার পক্ষে আজ অব্দি বুঝে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । এজন্য মায়ের খাওয়ায়ে দেয়ার দায়িত্বটা ও এখন নিজেই বুঝে নিয়েছে । যখন ছোট ছিলাম মনে পরে ওর হাত ধরেই স্কুলে যেতাম। এটা ওটা নানা প্রশ্ন করতাম , মনে পরে ... ৯ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরের কারো সাথে মেশা হয়নি এজন্য আমার খেলার সাথীও কিন্তু এই খুশিই। একবার খেলতে গিয়ে একটি বড় দূর্ঘটনা ঘটে , সেদিন ওর কান্না দেখেছিলাম সেকি কান্না ! ফুপিয়ে ফুপিয়ে । ঘন্টার পর ঘণ্টা গল্প করেই চলেছি দুজন গল্পের মাঝে চলছে ধারাবাহিক বিরতি , ও যে আমার ভাল বন্ধুও। একে নিয়ে আর কি বলব , ক্লাস ফাইভে থাকতে আমাকে সাইকেল চালানো শিখিয়েছে আর এখন আমার সাথে বাইকে ঘুরতে গেলে ওকে আর পাই কে , বাইকের পেছনে নিয়ে দে ছুট... !! আর হ্যা , রাগ করে একবার ৬ মাস কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল ! অসম্ভব জেদী ... ওর পাগলামি আবদার মেটাতে গিয়ে কত কিছুই যে করতে হয় তা আর নাইবা বললাম । আমার জন্য ও যা ত্যাগ করেছে তা সারা পৃথিবীর কোনো বোন তার ভায়ের জন্য করতে পারে না এটা আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি !! একে নিয়ে বলার মত কিছু নেই শুধু এতোটুকুই বলব “ আমার এক খুশিতেই আমি খুশি “ । সব সময় খুশি থাক হৃদয় জুড়ে 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু

রূপ; বহুরূপ !

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।