জন্মের পর প্রথম আব্বু বলে ডাকতে শিখেছিলাম !!
জন্মের পর প্রথম আব্বু বলে ডাকতে শিখেছিলাম । তখন আমি অনেক ছোট , একদিন খাচ্ছিলাম না বলে দাদী আমায় বলেছিল “ খেয়ে নে নাহলে জুজু ধরে নিয়ে যাবে !” আব্বু কাছেই ছিল । ঐ দিন রাতে যখন সবাই ঘুম আব্বু আমায় কোলে নিয়ে চুপি চুপি বাইরে বের হল ! কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করতে উত্তরে আব্বু বলেছিল “ আজ রাতে জুজু ধরতে হবে !! “ কিছু সময় খোঁজাখুঁজি করে জুজুর দেখা পেলাম না ! আব্বু বলেছিল “জুজু আমার খোকাকে দেখে ভয়ে লুকিয়েছে !!” ফিরে এসে আমায় আবার ঘুম পারিয়ে দিল । পরদিন যখন আবার দাদী জুজুর ভয় দেখিয়ে খাওয়ার কথা বলেছিল আমার উত্তর ছিল “ জুজু আমাকে দেখে ভয় পায় !! “ স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম , স্যার দাঁত দেখে বলেছিল “ তোমার বয়স হয়নি ২ বছর পরে আসবা !! “ বাসায় ফিরে সেকি কান্নাকাটি ... সেদিন ঝড়ের রাতে আব্বু আমায় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলেছিল “ বই পড়বা ? “ আমি উত্তরে বলেছিলাম “হু” । আব্বু আমায় ১ টা বই পড়তে দিয়েছিল বইটার নাম “সে-উ-সেন !! কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদ করা সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ” । সেদিনকার সেই বইটায় ছিল অ-আ-ক-খ এর পর আমার জীবনের ২য় বই যা ২৫-৩০ বছর বয়সী লোকের জন্য লেখা হয়ে থাকে । রহস্য, রোমান্স, অ্যাকশন আর দম বন্ধ হওয়া এক অন্য রকম পরিবেশ । গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম “মাসুদ রানা” । মাসুদ রানার চরিত্রের সাথে আব্বুর চেহারা দেখতে পেতাম । আব্বুই আমার মাসুদ রানা !!! ২ বছর পর স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু সেই ক্লাস ২ থেকে আজ অব্দি পড়ার টেবিলের কোণায় মাসুদ রানা সিরিজের বই দেখতে পায় !! একদিন গাছে উঠে আর নামতে পারছি না !! সবাই নিচে থেকে হাত উচু করে নামতে বলছে , ভয়ে নামছি না ! আব্বু এসে দু হাত উচু করে বলল “ হাতের অপর পা রাখ “ নির্ভয়ে পা রেখে নেমে এলাম । খেলা করতে গিয়ে একটা দুর্ঘটনায় জ্ঞান হারায় , ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের বেডে শুয়ে আছি , চোখ মেলে দেখি পাশের বেডে আব্বু ঘুমিয়ে আছে আমার হাত ধরে !! পরে জানতে পারি আমায় ওই অবস্থায় দেখে আব্বু আমার হাত ধরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল !! সেদিন সারা রাত আব্বুর জ্বর, সারা রাত প্রলাপ করেছিল আমায় নিয়ে । যেদিন আব্বুর ঘাড় টপকিয়ে গেলাম সেদিন থেকে আব্বুর ঘাড়ে হাত দিয়ে হাটি !! কোনো অচেনা লোক প্রথম দেখায় বলতে পারে না আমাদের সম্পর্কটা কি !! সবাই জানে আমার সেরা বন্ধু আমার আব্বু । উপজেলায় মিটিং চলছে আব্বু আর আমি রীতিমত ঘাড়ে হাত দিয়ে মোড়ের কোনার ১ দোকানে গিয়ে ২টা স্পিড ক্যানের অর্ডার দিলাম , ক্যান খুলে মুখে নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম মিটিং এর অধিকাংশ লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে !!! আব্বুর সাথে যখন রাজনৈতিক আলোচনা করি তখন বাসার বাকি সবাই চুপ থাকে । আব্বুর মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম লেলিন কালমার্ক্স এর কথা , বাংলাদেশের ইতিহাস , ৭১ , ৫২ , সৌরজগৎ , আমেরিকার গল্প , রাশিয়ার সমাজ ব্যবস্থা , বিভিন্ন দেশের সংবিধান , বিখ্যাত সব ব্যক্তিবর্গের পরিচয় আরো অনেক অনেক কিছু । তার পর শুরু হল পায়ের নিচে টুল রেখে উপস্থিত বক্তৃতা !! দাবার চাল আর তাসের ভাজ ধরা কিছুতেই শেখাতে পারল না ! কোনো কিছু ঘটলে আব্বু আর আমি বসে যাই সংলাপে ! আরো যে কত কিছু তা বলে শেষ করা যাবে না । ইনিই আমার সেরা বন্ধু , আমার প্রথম ডাক , আমার স্পন্ধন , আমার মন খারাপের সঙ্গী , যার সবটা জুড়ে আমি ...... আমার আব্বু ❤️
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন