মীর জাফররা যুগে যুগে কালে কালে থাকবে !



স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। সেই ক্লাইভ, মীর জাফররা আমাদের স্বপ্ন ছিনিয়ে নিয়েছিল, স্বপ্নের বুকে ছুরি চালিয়েছিল। তারপর কত শত দিন কেটে গেল, স্বপ্নের সঠিক ঠিকানা কেউ পেল না। কালক্রমে ব্রিটিশ জাতি থেকে পরিনত হওয়া গালি মীর জাফর নামটা বঙ্গদেশে নিষিদ্ধ হলো। স্বপ্নের বীজ বুনা শুরু হলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধেই হয়ত নিখিল ভারত স্বাধীনতা লাভ করতো। বঙ্গ ভঙ্গেই হয়তো বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌছে যেত। ক্ষুধিরামরা বাদ সাধল, বাধ্য করলো বঙ্গভঙ্গ রদ করতে। বাংলা আবার স্বপ্ন হারালো.. .

৩০ এর দিকে গর্জে উঠল আবার কিছু অকুতোভয় যোদ্ধারা। মাস্টারদা, আম্বিয়া, লোকনাথরা দখল করে নিল চট্টগ্রাম স্বপ্নের যেন সন্ধান মিললো। এবারও মসনদের লোভে নতুন মীরজাফরের জন্ম হলো। আবার পিছিয়ে গেলাম..

৩৯ আসলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সুভাসরা আজাদ হিন্দূ ফৌজ নিয়ে যুদ্ধ ঘোষনা করলো। ইংরেজরা মার খাচ্ছে। এই সুযোগ, এবার বাদ সাধলো গান্ধী সাহেব, জহুরলাল নেহেরু সাহেবেরা। বলে উঠল, ইংরেজদের এই বিপদে আমরা কঠোর হতে পারি না। চার্চিল সাহেবের আরজি নিয়ে গেলেন, আশি বছরের বৃদ্ধকে দয়া করুন, দয়া করে ভারতের স্বাধীনতা দিন। এই দিকে বন্দে মাতরম, ইনকিলাব জিন্দাবাদ শব্দে আকাশ পাতাল কাপছে।

৪৭ স্বাধীনতা নামক স্বপ্নের আলোকছটা দেখা গেল। ঘরের ইদুরে সিধ কাটতে শুরু করলো, বহিঃ শত্রুর চেয়ে বিপদ হল ঘরের শত্রুর। ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া লইতে চায়। ফাসির দাবী নিয়ে এগিয়ে এলেন কবিরা। ধীরেন্দ্রনাথরা হারবে না। সালামদের খুনে তখন বারুদের গন্ধ। ৫৪ গেলো যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এলো। স্বপ্ন মরিচিকা হয়ে ধরা পড়ছে। আইয়ুব খান এলো। এলো ভুট্টোরা…

তারপর ৬৫, ৬৯ আর ৭০ এর নির্বাচন.. ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। ভাষানীর মত অনেকেই বুঝতে পারলেন স্বপ্ন দেখলেই হয় না, প্রয়োজন রক্তের। এগিয়ে এসেছেন অনেকেই, দীপ্ত কন্ঠে ঘোষনা আসল মার্চ। মুক্তির সংগ্রামের...

ঘৃনার অযোগ্য হানাদার পাকিস্তানিরা তখন মানুষ বধে ব্যাস্ত। জেনারেল টিক্কাখান সময় প্রেক্ষিতে শুধু ক্লাইভের জায়গা বদল করেছে... মীরজাফররা যুগে যুগে জন্ম নেয়। নাম পরিবর্তন হলো রাজাকার, আলবদর, আল শামস। তবে তারা সফল হতে পারেনি। আমার সাজানো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে আর ফুল নিয়ে গেল ভারতীয়রা!! যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হয়েও ওসমানিদের আনা হল না। পাকিস্থান কাগজ কলমে আত্ন সমর্প্ন করল ভারতের কাছে!! জয় বাংলা …

তারা ব্যর্থ হয়নি একেবারে। আমাদের পঙ্গু করে দেওয়া হলো। ডিসেম্বর ১৪!! বুদ্ধিজীবীরা হারিয়ে গিয়েছে। আবার ঘরের ইদুরে সিধ কাটল। জানতেই পারলাম না সঠিক ইতিহাস। এক সু-নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আমরা হয়ে গেলাম ইতিহাস বিমুখ ১৬ ডিসেম্বর!! পৃথিবীর ইতিহাসে বিজয়ের এক পাতা আমাদের। আগামীর স্বপ্ন লালন করে নতুনভাবে দেশ গড়ার শপথ নিয়ে এগিয়ে চললেই আমরা কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেখা পাব।

মীর জাফররা যুগে যুগে কালে কালে থাকবে। আমার, আপনার যুদ্ধ কখনোই থামবে না। এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যেয়ে। পথ হারাবে না বাংলাদেশ। এই কামনা। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা...

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একতারা ভাস্কর্য, একতারা চত্বর হরিণাকুন্ডু

রূপ; বহুরূপ !

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।